Monday, December 5, 2016

প্রশ্নঃ মীলাদুন নাবী’ (নবী দিবস) অথবা বার্থ-ডে কি পালন করা যাবে ?

  আসসালামুয়ালাইকুম ওরাহমতুলল্লাহি ওবারাকাতু

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বইঃ দ্বীনী প্রশ্নোত্তর, অধ্যায়ঃ বিদআত, অনুচ্ছেদঃ ‘ঈদে মীলাদুন নাবী’ (নবী দিবস) পালন করা বৈধ নয় কেন? ‘ঈদে মীলাদুন নাবী’ (নবী দিবস) পালন করা বৈধ নয় কেন? মহান আল্লাহ আমাদের দ্বীন ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন তাঁর নবীর জীবদ্দশাতেই। মহান আল্লাহ বলেন, “আমি
তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ (নেয়ামত) সম্পূর্ণ করলাম এবং
ইসলামকে তোমাদের ধর্মরূপে মনোনীত করলাম।(সূরা মায়েদাহ ৩ আয়াত) আর মহানবী (সঃ) বলেন, “ যে ব্যক্তি আমাদের এ (দ্বীন) ব্যপারে নতুন কিছু আবিষ্কার করে, সে ব্যাক্তির সে কাজ
প্রত্যাখ্যাত।” ৯১ (বুখারী ও মুসলিম) “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করে, যার উপর আমাদের কোন নির্দেশ
নেই, সে ব্যক্তির সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।” ৯২ (মুসলিম)
ইসলামে পালনীয় ঈদ হল মাত্র দুটি; ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। তৃতীয় কোন ঈদ ইসলামে নেই।
মহানবী (সঃ) নবুয়তের ২৩ বছর কাল নিজের জীবনে কোন বছর নিজের জন্মদিন পালন করে যাননি। কোন সাহাবীকে
তা পালন করার নির্দেশও দেননি। তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের জন্ম মৃত্যু উপলক্ষে কোন আনন্দ অথবা শোকপালন করে যাননি। তাঁর পরবর্তীকালে তাঁর চারজন খলীফা তাদের খেলাফতকালে রাষ্ট্রীয়ভাবে অথবা একেকভাবে নাবীদিবস পালন করে যাননি।
অন্য কোন সাহাবী বা আত্মীয়ও তাঁর প্রতি এত ভালবাসা ও শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে শোক পালন করেননি।
তাঁদের পরেও কোন তাবেঈ অথবা তাঁদের কোন একনিষ্ঠ অনুসারী অথবা কোন ইমাম তাঁর জন্ম কিংবা মৃত্যুদিন পালন করার
ইঙ্গিত দিয়ে যাননি। সুতরাং তা যে নব আবিষ্কৃত বিদআত, তা বলাই বাহুল্য। খ্রিস্টানরা আন্দাজে ২৫ শে ডিসেম্বর যীশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব (মীলাদ, বড়দিন বা ক্রিসমাস ডে) এবং তাঁদের পরিবারের প্রত্যেক
ব্যক্তির জন্মদিন (বার্থডে) বড় আনন্দের সাথে পালন করে থাকে। মুসলিমরা তাঁদের মত আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার উদ্দেশ্য
এই বিদআত ওদের নিকট হতেই গ্রহণ করে নিয়েছে। তাই এরাও ওদের মত নবীদিবস (ঈদে-মীলাদুন-নাবী) এবং পরিবারের
সভ্যদের (বিশেষ করে শিশুদের) ‘হ্যাপি বার্থ ডে’র অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে। অথচ তাঁদের রাসুল (সঃ) তাঁদেরকে সাবধান
করে বলেন, “ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই একজন।” ৯৩ (আবুদাঊদ)

উত্তর দিয়েছেন শায়েখ ,আব্দুল হামীদ ফাইজী

বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ = নতুন আবিষ্কার। শরিয়াতের পরিভাষায় বিদআত হচ্ছে ধর্মের নামে নতুন কাজ, নতুন ইবাদত আবিষ্কার করা।
নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার ব্যাপারে আমার শরীতের নির্দেশনা নেই, উহা প্রত্যাখ্যাত।” (মুসলিম-৩২৪৩)
রাসূল (সাঃ) আরো বলেন- "নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহ্‌র কিতাব, সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পদ্ধতি। আর নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে শরীয়াতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা, এবং প্রত্যেক বিদ'আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা। (মুসলিম-৭৬৮)
"রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন, যে আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়। (বুখারীঃ ৫০৬৩)
অর্থাৎ যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পদ্ধতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নতুন নতুন ইবাদাত আবিষ্কার করবে অথবা আল্লাহ্‌র নৈকট্যের জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করবে সে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পদ্ধতিকে তুচ্ছ মনে করল।
যে কোন সাধারন মানুষকে যদি জিজ্ঞাস করা হয় যে- আল্লাহ্‌ যথাযথ ইবাদের জন্য এবং আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের জন্য রাসুল (সাঃ) এর দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এবং ইবাদাত সমূহ উত্তম নাকি কোন বড় আলেমের দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এবং ইবাদাত সমূহ উত্তম? নিঃসন্দেহে রাসুল (সাঃ)-এর দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি-ই এবং ইবাদাত সমূহ-ই উত্তম হবে। অতএব কেউ যদি আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর রাসুল (সাঃ)-এর দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এবং ইবাদাত সমূহকে উত্তম মনে না করে, বর্তমান যুগের আলেমদের দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এবং ইবাদাত সমূহকে উত্তম মনে করে তবে উপরের হাদিস অনুযায়ী সেই ব্যক্তি আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উম্মত-ই থাকবে না। তাহলে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উম্মত-ই থাকবে না, কিয়ামতের দিন তার সুপারিশের কি অবস্থা হবে? তাকে কি আল্লাহ্‌ ক্ষমা করবেন?

No comments: